ওসমান হাদি মারা গেছেন

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ ঘন্টা আগে

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

এনসিপি স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা ডা. আহাদ ভিডিও বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে আমরা খবর পেয়েছি যে হাদি ভাই পরপারে চলে গিয়েছেন।’

এর আগে ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।ওসমান হাদির ফেসবুক পেইজ থেকে জানানো হয়, ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদীকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরের নেওয়া হয় । সিঙ্গাপুরেই হাদি চিকিৎসাদীন অবস্থায় মারা যান হাদি।

এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিজয়নগর বক্সকালভার্ট রোডে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে তার মস্তিষ্কে একটি অপারেশন করা হয়। এরপর উন্নত আইসিইউ সাপোর্টের জন্য তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তখন থেকেই বলে আসছিলেন যে তার অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটজনক’ অবস্থা। এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার পর তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর আইসিইউ ও এইচডিইউ ডা. মো. জাফর ইকবাল জানিয়েছিলেন, ‘এভারকেয়ার হাসপাতালে রোববার সকালে পুনরায় করা সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ফোলা পূর্বের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি নির্দেশ করে।’

এছাড়া ফুসফুসের কার্যকারিতা স্থিতিশীল রয়েছে, উল্লেখযোগ্য উন্নতি বা অবনতি হয়নি। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরের কিছু হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। ব্রেন স্টেমে আঘাত ও মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ফোলাজনিত চাপের কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। রোগীর সার্বিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে বর্ণনা করেছেন চিকিৎসকরা। এরপর পরিবারের সম্মতিতে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, ‘ওই রাতেই অর্থাৎ হাদিকে গুলি করার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতের প্রবেশ করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখও তার সঙ্গে ছিলেন।’

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্প্রতি আলোচিত-সমালোচিত নামগুলোর একটি হয়ে উঠেছিলেন শরীফ ওসমান হাদি। নিজের বক্তব্য আর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যেমন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তেমনি কুড়িয়েছেন সমালোচনাও। অল্প সময়েই সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় এই যুবক প্রতিপক্ষের কাছে হয়েছেন চক্ষুশূল।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিভিন্ন রায় নিয়ে সোচ্চার ছিলেন হাদি। সামাজিক মাধ্যম কিংবা বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুষ্ঠান-আলোচনায় নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের সময় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া কিংবা গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নেতাদের ওপর হামলার পর হাদির বক্তব্যে অশালীন শব্দের ব্যবহার নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল।

তার বক্তব্যে গণমাধ্যমে ‘অপ্রকাশযোগ্য’ শব্দের ব্যবহার অনেকে যেমন সমালোচনার চোখে দেখেছেন, অন্যদিকে তার সমর্থকেরা তাকে স্পষ্টভাষী হিসেবে প্রশংসাও করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে তার বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে বেশ ভাইরাল হতে দেখা যায়।

রাজনীতির লাইমলাইটে যেভাবে

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করা শরীফ ওসমান হাদি। পাশাপাশি একটি ইংরেজি শিক্ষার কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন তিনি। শিক্ষা জীবন থেকেই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন বরিশালের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থেকে উঠে আসা এই যুবক।

ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করা ওসমান হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে চলে আসেন রাজধানীতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সক্রিয় কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা যায়নি তাকে। মূলত ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান তাকে তুলে আনে রাজনীতির মঞ্চে।
যেসব বিষয়ে আলোচনা-বিতর্ক

সামাজিক মাধ্যম কিংবা গণমাধ্যমে নানা কাজ ও বক্তব্যের মাধ্যমে যেমন আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তেমনি নানা কারণে বিতর্কিতও হয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। আওয়ামী লীগ এবং ভারত-বিরোধী রাজনীতিতে সোচ্চার ছিলেন তিনি। এছাড়া রাজনীতির মাঠের বক্তব্যে কিংবা সামজিক মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যেরও সমালোচনায় মুখর হতে দেখা গেছে তাকে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কিংবা নির্বাচনী প্রচারণায় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে মুড়ি-বাতাসা বিতরণের ছবি নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন তিনি।

এছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে প্রচারণার কৌশল কিংবা রাজনৈতিক নানা বক্তব্যের মধ্য দিয়েও তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

ঢাকা-৮ সংসদীয় আসন (মতিঝিল, পল্টন, রমনা ও শাহজাহানপুর এলাকা) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওসমান হাদি। বেশ কিছুদিন ধরেই তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণাও চালাচ্ছিলেন।

নির্বাচনী প্রচারণার নানা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দিয়েও আলোচনায় এসেছেন তিনি । সম্প্রতি প্রচারণার সময় ওসমান হাদির পকেটে একজন টাকা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়।

এছাড়া ভোররাতে মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণ, নির্বাচনী ইশতেহার, ডোনেশনের মাধ্যমে ফান্ড কালেকশন কিংবা প্রচারণার সময় কেউ তাকে অর্থ দিচ্ছেন এমন নানা ভিডিও হাদি নিজেই সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতেন।

ওই আসনে নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মির্জা আব্বাস, এনসিপি থেকে আলোচনায় আসা রিক্সা চালক সুজন এবং জামায়াতের প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় থাকা সাদিক কায়েমকে স্বাগত জানিয়েও আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

 

  • ওসমান হাদি
  • গেছেন
  • মারা
  • #