বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে পিন্টু আকন্দ (৩৫)এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। অপহরণের ছয় ঘণ্টা পর সোমবার রাত ৩টার দিকে পাশের আদমদীঘি উপজেলার কুমারপাড়া এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস। আটক তিনজন হলো সানোয়ার হোসেন, সাকিব হোসেন ও সাগর।
নিহত পিন্টু নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার লৌহচড়া এলাকার আয়েজ উদ্দিনের ছেলে। দুপচাঁচিয়া উপজেলার সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লোটো জুতার শোরুমের মালিক তিনি। পিন্টু চার বছর ধরে দুপচাঁচিয়া শহরে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বাস করছিলেন।
জানা গেছে, সোমবার রাত ৯টার দিকে অস্ত্রের মুখে চারজন পিন্টুকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। সবাই মাস্ক পরা ছিল। ওই ঘটনার দৃশ্য সিসিটিভির ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
পুলিশ ও সিসিটিভি ফুটেজ সূত্র জানায়, প্রতিদিনের মতো শোরুম তদারকি করছিলেন পিন্টু। শোরুমে আর কেউ ছিল না। রাত ৯টা ৭ মিনিটে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস শোরুমের সামনে এসে পার্কিং করে। চালক ছাড়া চার যুবক ভেতর থেকে পিন্টুকে টেনেহিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তোলে। এক মিনিটের মধ্যে তাকে অপহরণ করে বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে আদমদীঘি উপজেলার দিকে চলে যায় তারা। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ মাইক্রোবাসের সিটের নিচে ঢেকে রাখে তারা। রাত সাড়ে ১২টায় আদমদীঘি-তিলোকপুর সড়কের কোমারভোগ গ্রাম এলাকায় মাইক্রোবাসটি অচল হয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা মরদেহ ও মাইক্রোবাস রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ প্রযুক্তির মাধ্যমে মাইক্রোবাসের অবস্থান শনাক্ত করে সেখান যায়। এরপর মরদেহ উদ্ধার ও গাড়িটি জব্দ করে। রাতেই দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ চালক সানোয়ার হোসেনসহ তিনজনকে আটক করে।
মাইক্রোবাসের মালিক মশিউর রহমান পান্না জানান, সোমবার বিকেলে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাজশাহীতে আসামি ধরতে যাওয়ার কথা বলে দুপচাঁচিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তার মাইক্রোবাস ভাড়া করে তিনজন। সন্ধ্যা ৬টার পর পাঁচ-ছয়জন দুপচাঁচিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মাইক্রোবাসে উঠে সান্তাহারের দিকে চলে যায়।
মশিউর বলেন, গাড়িটি ভাড়া নেওয়ার পর থেকে আমি জিপিএসের (স্যাটেলাইটভিত্তিক প্রযুক্তি গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) মাধ্যমে গাড়িটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। মাইক্রোবাসটি সান্তাহার থেকে আবারও দুপচাঁচিয়া ফিরে এলে চালককে ফোন করি। তিনি জানান, রাজশাহী যাওয়া বাতিল হয়েছে তালোড়ায় আসামি ধরতে যাবে। এর আগে দুপচাঁচিয়া থানা থেকে দুই পুলিশ সদস্য গাড়িতে উঠবেন। রাত ১০টার দিকে সামাজিক মাধ্যমে মাইক্রোবাসে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের দৃশ্য দেখতে পাই। এরপর জিপিএসের মাধ্যমে দেখি, আমার মাইক্রোবাসটি তালোড়া হয়ে নন্দীগ্রাম থানা এলাকা ঘুরে সিংড়া উপজেলার কালীগঞ্জ হয়ে রাণীনগর এলাকা ঘুরে সান্তাহার আসে। সেখান থেকে আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রামে গাড়িটি অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, এ সময় চালককে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে দুপচাঁচিয়া থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানালে থানার ডিউটি অফিসার বলেন, দুপচাঁচিয়া থানা থেকে কোনো অপহরণের ঘটনা তাদের জানা নেই। কিন্তু গাড়ির গতিবিধি সন্দেহজনক এবং চালক ফোন রিসিভ না করায় রাত ১১টার দিকে আমি জিপিএসএর মাধ্যমে গাড়িটি বন্ধ করে দিই। এরপর দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশকে ঘটনাটি বিস্তারিত জানাই।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া মুখপাত্র) আতোয়ার রহমান জানান, অপহরণের ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস জব্দ ও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।