দেশে নার্স-সংকট নতুন নয়, তাই বলে জোড়াতালি দিয়ে সংকটের সমাধান করাও কাম্য নয়। একজন চিকিৎকের বিপরীতে তিনজন রেজিস্টার্ড নার্স প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার জন নিবন্ধিত চিকিৎসকের বিপরীতে রেজিস্টার্ড নার্স রয়েছেন মাত্র ৯৫ হাজার ১৬৮ জন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিকিৎসকের অনুপাতে বর্তমানে নার্স থাকার কথা ৪ লাখ ১৪ হাজার। অর্থাৎ দেশে নার্সের ঘাটতি বর্তমানে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮৩২ জন। একজন রোগীকে আদর্শ ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিতে হলে একটি মেডিকেল টিম প্রয়োজন। সেই টিমে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকতে হয়। সেখানে বাংলাদেশে নার্সে সংখ্যা এত কম যে, গড়ে দুজন চিকিৎসকের বিপরীতে একজন নার্স রয়েছেন। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি পাঁচ চিকিৎসকের বিপরীতে দুজন নার্স রয়েছেন। ফলে সেবা দেওয়ার যে টিমওয়ার্ক সেটি হচ্ছে না। আর মানসম্মত সেবা গড়ে উঠছে না বলেই চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে মানুষের এত প্রশ্ন উঠছে।
শুধু চিকিৎসক ও কারখানা তৈরি করে কোনো লাভ নেই, যদি দেশের মানুষকে মানসম্মত সেবা দিতে হয় তা হলে নার্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যথাযথ পদায়নের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। নার্সরা হলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হৃৎপিণ্ড। একজন রোগীর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি থাকেন নার্স। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সরা দিন-রাত নিজের ঘাম ঝরা পরিশ্রম দিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করে তোলেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বৈরিতা ও অস্বচ্ছতা, উপযুক্ত কাজের পরিবেশের অভাব, রোগীর স্বজনদের দুর্ব্যবহার, পদোন্নতির ঘাটতিসহ কর্মক্ষেত্রে নানা অবজ্ঞা-লাঞ্ছনা সহ্য করে কাজ করতে হয় তাদের। ফলে নার্সদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নানামুখী প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ কর্মক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনদের নানা অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে অতিরিক্ত রোগীর চাপ নিয়ে কাজ করতে হয় নার্সদের। ফলে নার্সরা যেমন কাজের সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেন না তেমনি রোগীরাও মানসম্মত এবং কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে রোগী, ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যাগত সমন্বয় করা জরুরি। কারণ নার্সরা ভালো না থাকলে রোগী ভালো সেবা পাবে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নার্সরা ভূমিকা রাখলেও নার্সদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাই উদাসীন। আমাদের দেশে নার্স সংকটের কারণে রোগীরা তাদের কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এবং নার্স ও নার্সিং পেশার মান্নোনয়নে নার্সিং খাতে বাজেট বাড়াতে হবে এবং নার্সদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।