নব্বই দশকের প্রথম দিকে আমি যখন চিনে যাই তখন স্লোগান ছিল ‘ধনী হওয়া গৌরবের’। তবে একসঙ্গে ধনী হওয়া যাবে না। এক এক করে ধনী হতে হবে। সব দেশে কম্যুনিজমের পতন হবার পর আমি তিনবার রাশিয়া গিয়ে মধ্য এশিয়া থেকে সাইবেরিয়া পর্যন্ত ঘুরেছি। চীনের গোয়াংচো, নানজিং, সাংহাই, বেইজিং সব দেখা। উত্তর-দক্ষিণ ভিয়েতনাম ও লাওসও খুব ভালোভাবে ঘুরেছি। তবে চিনের চেয়ে রাশিয়ার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু সেখানে তখন কোনো ধনী ছিল না। চীন তো দেশের মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য বণ্টন করেছিল। কারও ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল না। ব্যক্তিগত ফ্রিজ ছিল না। রাশিয়াতে কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকেও দু’কামরার ঘরে থাকতে হত। তিন কামরার ফ্ল্যাটে বাস করা বিলাসিতা বলে গণ্য হত। আর তিন কামরার ফ্ল্যাট দেওয়া হতো পিপলস আর্টিস্ট বা অ্যাথলেটদের অথবা যার অনেকগুলো ছেলেপুলে শুধু তাদেরই।
চীনে একজন শ্রমিক থেকে এমডি সবাই সাইকেল চালিয়ে অফিসে আসতেন। সেই চীন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম এখন গেলে আর চেনা যাবে না। পশ্চিম ইউরোপের শহরগুললোর মতোই সমৃদ্ধ। আমেরিকার মতোই চীনের রাস্তায় এখন গাড়ির পর গাড়ি।
চীনে বিশ্বের সমস্ত দেশ থেকে পুঁজিপতিরা এসে যেমন লগ্নি করেছে, তেমন মুক্ত অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে চীন ও রাশিয়ায় লাখ লাখ তরুণ স্বাধীন ব্যবসায়ে, স্টার্টআপ তৈরির কাজে নেমে পড়েছে। সবাই এখন নতুন প্রযুক্তি শিখছে। প্রত্যেকেরই এখন একটাই লক্ষ্য এই নতুন পৃথিবীর উপযুক্ত হয়ে মুক্ত অর্থনীতির সমস্ত সুযোগ সুবিধা ছিনিয়ে নিয়ে অবস্থা ফেরাতে হবে। প্রত্যেকের চোখে একটা স্বপ্ন। ধনী হতে হবে। ধনী হওয়া শুধু গৌরবের নয়, এই মানবজন্মকে ভরিয়ে তোলার একমাত্র উপায়।
এটিই নব্য ধনতন্ত্র। ধনতন্ত্রের প্রথম যুগে শুধু ধনীর ছেলেই আরও ধনী হবার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু বিশ্বায়িত নব্য ধনতন্ত্র সমস্ত দেশের তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন দেখায়- তুমিও ধনী হতে পার। ধনী হওয়া গৌরবের।
লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান, শেরে বাংলা ফাউন্ডেশন