কেন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গানের সাথে সাথে নাচ করে সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে একটি গভীর অন্তর্দৃষ্টি পেয়েছেন। নতুন এ গবেষণায় জানা যায়, বিট-এ ধাক্কা খাওয়ার প্রবণতা যাকে কিছু বিজ্ঞানী ‘গ্রুভ এক্সপেরিয়েন্স’ বলে থাকেন। যা সঙ্গীতের সিনকোপেশন বা তালের ডিগ্রির উপর নির্ভর করে। এটা এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা তালটি কতটা অনুমানযোগ্য তা নির্দেশ করে।
ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ার ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ও গবেষক বেনোইট বার্ডি বলেন, আমরা যখন বিটের সঙ্গে তালের মুভ সমন্বয়ও করতে পারি না, তখন আমরা তালের সর্বোত্তম স্তরের সঙ্গে গান শুনি। তিনি এটিকে ‘বিজ্ঞানের একটি খুব উদ্ভাবনী অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সিনকোপেশন হল ছন্দময় প্যাটার্ন যেখানে উচ্চারিত বা উচ্চারণবিহীন গান বা সুরের বিট , যা একটি আশ্চর্যজনকভাবে স্ট্যান্ডার্ড বিটের জায়গায় উপস্থিত হয়। মিউজিকের একটি অংশে যত বেশি সিনকোপেশন বা তাল থাকবে, শোনার সঙ্গে সঙ্গে তত কম সঠিকভাবে ছন্দ অনুমান করতে পারবেন।
ফ্রান্সের অ্যাক্স-মারসেইল ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিজ্ঞানী বেঞ্জামিন মরিলন এবং তার দল পরীক্ষা করেছেন, কীভাবে সিনকোপেশন বা তাল হার্জের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি পরীক্ষায়, তারা বারোটি আলাদা সুর চালিয়েছেন। প্রধান বিট সর্বদা দুই হার্টজ, বা প্রতি সেকেন্ডে মোটামুটি দুটি হার্জ ঘটে। কিন্তু সুরের ছন্দগত পরিবর্তনে প্রতিটি সুর তিনটি ভিন্ন মাত্রার তালের সঙ্গে বাজে। অংশগ্রহণকারীরা তারপর রেট করেছে, তারা প্রতিটি ট্র্যাকে কতটা নাচতে চায়।
মরিলন এবং তার সহকর্মীরা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ রিপোর্ট করেছেন, একটি মাঝারি মাত্রার তালের সুরসঙ্গীতে নাচার প্রবল প্রবণতা থাকে। বিপরীতে, তালের ডিগ্রি খুব বেশি বা নিম্ন হলে একই ফলাফল ছিল না। অপরদিকে, বিশেষভাবে সম্পূর্ণ অনুমানযোগ্য ছন্দে কিংবা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ছন্দে কেউই তেমন একটা নাচতে চায় না।
মস্তিষ্ক কীভাবে সুর থেকে এই মুভমেন্ট গ্রহণ করে তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য, মরিলন এবং তার সহকর্মীরা ম্যাগনেটো এনসেফালোগ্রাফি ব্যবহার করে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করেছেন। ম্যাগনেটো এনসেফালোগ্রাফিএমনএকটি প্রক্রিয়া যা সঙ্গীত শোনার সময় মস্তিষ্কের দ্বারা উৎপাদিত চৌম্বকীয় ফিল্ডকে পরিমাপ করে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে- মস্তিষ্কের শ্রবণ কর্টেক্স ও শ্রবণ স্টিমুলি প্রক্রিয়াকরণের প্রধান অঞ্চল প্রাথমিকভাবে সঙ্গীতের তাল অনুসরণ করে চলে। এদিকে অডিটরি পাথওয়ে, মস্তিষ্কের এলাকা যা শ্রবণ কর্টেক্সকে মুভমেন্টের সঙ্গে কানেক্ট করে, যেখানে ছন্দটি স্পষ্টতই মৌলিক বিটের সঙ্গে ম্যাচ করে। আর এভাবে আমাদের মধ্যে নাচের আবেগ উদ্ভূত হয়, যা পরবর্তীতে মুভমেন্টের আবেগ হিসেবে মোটর এলাকায় প্রেরণ করে। মরিলন বলেছেন, মাঝারি স্তরের সিনকোপেশন বা তালের সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্ক সুর থেকে পর্যায়ক্রমিক বিট বের করতে পারে।
রকফেলার ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং নিউরোবায়োলজি অফ সোশ্যাল কমিউনিকেশন ল্যাবের ডিরেক্টর কনস্টান্টিনা থিওফানোপোলু। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীত ও নৃত্য স্নাযুবিজ্ঞানে আলাদাভাবে পঠিত হয়েছে। তবে এই গবেষণাটি সঙ্গতি ও নাচের মধ্যে ব্যবধান দূর করার দিকে একটি পদক্ষেপ ।
মরিলন বলেন, আমরা কীভাবে সময়কে উপলব্ধি করে এবং আমাদের মোটর সিস্টেম সাময়িক প্যাটার্ন সনাক্ত করে ভবিষ্যতের ঘটনার পূর্বাভাস পেতে সহায়তা করে। আমাদের কাছে শব্দ এবং আলো প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিশেষ সিস্টেম রয়েছে, কিন্তু সময় উপলব্ধি অধরা থেকে যায়।
সূত্র : নেচার থেকে, অনুবাদ : ইমামুল ইসলাম