কে আমাদের প্রকৃত বন্ধু? এ সময় তো মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না। তবুও কেন যে বলা হয় মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ। বিশ্বাস করে ঠকাও ভালো, কিন্তু বিশ্বাস করে খুন হওয়া কি ভালো? পৃথিবীতে যত রেপ হয় তার মধ্যে অর্ধেক রেপিস্ট নারীর পূর্ব পরিচিত, না হয় বন্ধু। ডেট-রেপ বন্ধুরাই করে, না হয় অফিসের বস কিংবা সহকর্মীরা। আর খুন? তিনটি খুনের দুটি করে বন্ধু, পরিচিত, আত্মীয়স্বজন এবং বিশ্বস্তরা। এইতো গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের একজন সাংসদ কলকাতায় খুন হলেন। তার অন্তরঙ্গ এক বা একাধিক বন্ধু খুনের দায়ে অভিযুক্ত। সবচেয়ে বিশ্বস্ত আপনার কোন আত্মীয় বা বন্ধুই আপনার সম্ভাব্য খুনি হতে পারে। আজ যে আপনার প্রশংসা করছে, কাল আপনার নামে সবচেয়ে কুৎসা রটাতে পারে। এটি শুধু রাজনীতিতে নয়, যে কারও ব্যক্তিজীবনে হতে পারে। যাকে সবচেয়ে সাহায্য করেছেন তাকেই একদিন দেখবেন ছোরা হাতে শিয়রে।
আচ্ছা, আমি আপনি না হয় কোনো বন্ধুর কাছে মহাপরাধ করে ফেলেছি কখনও, কিন্তু যিশুখ্রিস্ট, ভগবান বুদ্ধ এরা কি আমার-আপনার মতো বাজে লোক ছিলেন? যিশুকে ধরিয়ে দিলেন ব্রুটাস। তার প্রিয় শিষ্যদের একজন। ভগবান বুদ্ধের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিলেন তার কাজিন দেবদত্ত। তিনি নিজে বুদ্ধের অনুকরণে ধর্ম প্রচার শুরু করেন এবং বুদ্ধকে হত্যার চক্রান্ত করেন। জুলিয়াস সিজারকে হত্যা করেন তার অন্তরঙ্গ বন্ধু আর এক ব্রুটাস। রাজনীতিতে এমনটা অহরহ দেখা যায়। কেউ বাবাকে হত্যা করছে, কেউ নিজের ছেলেকে, বিশ্বস্ত কর্মচারী প্রভুকে। নজরুল লিখেছিলেন, আজ যার শিরে হানিছে পাদুকা, কাল তারে বলে পিতা। বঙ্গ আক্রমণ করে, নবদ্বীপ লুণ্ঠন করে বখতিয়ার খিলজি যে মুসলিম সাম্রাজ্য স্থাপন করে গেলেন, তিনিই কয়েক বছরের মধ্য নিহত হলেন। কে তাকে হত্যা করলেন? তার সঙ্গী কিংবা প্রিয় বন্ধু হয়তো বা কেউ।
চাণক্যের মতে, যিনি আপনার পাশে থাকেন, আপনাকে সমর্থন করেন, তাকে আপনার প্রকৃত বন্ধু বলা হয়। চাণক্যের মতে, যে বন্ধুরা অসুস্থতায়ও আপনাকে ছেড়ে যায় না, বরং আপনাকে সাহায্য করে, সেই বন্ধুরাই সত্যিকারের বন্ধু। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা আপনার জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে।প্রকৃত বন্ধু তিনি, যিনি আপনার উপকার করতে চান আর উপকার করতে না পারলে ক্ষতি করেন না। উপকারটা হতে পারে কোন উপকারী বস্তু দ্বারা কিংবা সৎ উপদেশ দ্বারা।
প্রায়ই খবরের কাগজে দেখি নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা। আসামির কাঠগড়ায় কারা? হয় স্বামী, না হয় শাশুড়ি, ননদ। সবাই পরিচিত। স্বামী কে? প্রাক্তন প্রেমিক। হরিহর আত্মা। তখন কে ভেবেছিল সে পরিহর আত্মা হয়ে উঠবে কিছু দিনের মধ্যেই।
আমার নীতি হল- Aquaintances with many, friendship with few. আপনি এই বয়সে আর নিজে থেকে বন্ধুত্ব করতে যাবেন না। বন্ধুত্ব আপনা-আপনি তৈরি হতে দিন। আর যেদিন নতুন বন্ধুর সঙ্গে বোতল খুলে অথবা কফির টেবিলে বসবেন, মনে মনে সম্পর্কের একটা expiary date ঠিক করে রাখবেন। দশ বছর পর আপনার পাসপোর্টও রিনিউ করতে হয়। এভাবে রিনিউ করতে করতে পাসপোর্টের মেয়াদ আর জীবনের মেয়াদ যত দিন চলে। প্রত্যেকেই তাদের পরীক্ষায় পাশ করুক। চাণক্যনীতিতে আছে- আত্মানং সততং রক্ষেদ্ দারৈরপি ধনৈরপি (বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য ধন)।
সবশেষে বলি, বন্ধুকে বা আত্মীয়কে ব্যবসার পার্টনার করবেন না। একই পেশায় নিযুক্ত কাউকে বন্ধু করবেন না। নিজের অফিসে বৌকে বসাবেন না। আপনি যদি দাদা-দিদিদের মতো স্লেভ হন তাহলে হাজার হাজার ফ্যান কিংবা ফলোয়ার তৈরি করুন। যদি রাজনৈতিক নেতা হন লক্ষ লক্ষ ভোট ব্যাংক তৈরি করুন। কিন্তু একটিও বন্ধু তৈরি করতে যাবেন না, তাহলে আপনাকে শহিদ হতে হবে।
লেখক : বিশ্লেষক ও সমাজসেবী