কোরবানির পশুপালনে নারীর অংশগ্রহণ বেশি, বিক্রিতে কেন বঞ্চিত

: সৈয়দা রাশিদা বারী
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

প্রতিবছর কোরবানির সময়ে রমরমা ব্যবসা হয় সাধারণত বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সবগুলো পশুহাটে। দেশের অর্থনীতিতে অন্তত পুরুষের পাশে নারীরও একটা ভূমিকা থাকতে পারে। আর নিশ্চয়ই সেটা থাকলে মন্দ হয় না। আমার চেনা কয়েকটি পশু বা গরুর হাটের নাম ঢাকার গাবতলী গরুর হাট, মানিকগঞ্জের বাথলী গরুর হাট, কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন নগর গরুর হাট, বানিয়াপাড়া গরুর হাট। সামান্য তদন্তে দেখছি যে, ১০৬ বছর বয়সি পশু হাটেরও হদিস আছে। কিন্তু কোনো হাটের কোথাও নারীর কোনো স্থান নেই।

আমাদের দেশ এখন সবকিছুতে বেশ এগিয়ে চলেছে। নারী শ্রমিকের হার আগে তুলনায় বেড়ে চলেছে। তারা আর এখন কেউ ঘরে বসে নেই। নারী-পুরুষ একযোগে কাজ করছে দেশের উন্নয়নে। রাস্তায় মাটিকাটা, বালি টানা, খোয়া ভাঙা, ইট ধোয়া, কালভার্ট বিল্ডিংয়ের প্লাস্টার করা, মাঠের নানা ফসলের কাজ করা থেকে কোথাও বাদ নাই যে নারী শ্রমিক নাই। নারী শাসন-শোষণ-নির্যাতনের হার কমাতে এদেশের বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ এবং উৎসাহে নারী শ্রমিকের স্থান সব সেক্টরে আছে ইনশাল্লাহ।

শুধু এই সেক্টর অর্থাৎ কোরবানির পশুব্যবসা খাত বাদে। কিন্তু নারীরাই তো পশুর খামারগুলোতে পশুলালন পালনে বেশি শ্রম দিচ্ছেন। কেবল এই পশুর হাট বাদে। এখানেই নারী তার লালন-পালনকৃত পশু বিক্রি করতে, অর্থ সঞ্চয় করতে মার খেয়ে যাচ্ছেন বলে নারী পশুখামারি ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানতে পারি।

নারী তার পশুপালনের পারিশ্রমিক বুঝে নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন এই একটা বিষয়ে আমার আলোচনা। নিজের উপস্থিতিতে বিক্রি করতে পারছেন না তার লালন-পালনকৃত পশুটি। অন্য পুরুষের হাতে তার লালন-পালনকৃত পশুটি দিতে হচ্ছে বিক্রি করার জন্য। তখনই তার পশু বিক্রির লভ্যাংশর পুরা অর্থ  উঠাতে পারছেন না। পিঁপড়ে খেয়ে নিচ্ছে বলে তারা জানান।

পশুর যাবতীয় খাবারের খরচ নারীরা বহন করে। এছাড়া সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপশি  পশুপালনে তারা সময়ও ব্যয় করেন। তাদের অভিযোগ, স্বামী ছাড়াও অন্য পুরুষ আত্মীয়ের কাছে দিলেও তারা বিক্রিত পুরো অর্থ নারীদের দেয় না। তাই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে কোরবানির পশুপালন এবং বিক্রিবাবদ প্রাপ্য অর্থ পেলে নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি আরও বেশি স্বাবলম্বী হতে পারবেন।

পশুপালনকারী নারীদের বক্তব্য হল, তাদের পালিত পশুটি বিক্রির সময় অন্যের হাতে দিলে তখন পশুটি ঠিকমতো খায় না এবং গোসলও করতে চায় না। এভাবে তার পশুটি গায়ে-গতরে মাংসে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে সঠিক দামে তার কষ্টের লালন-পালন করা পশুটি বিক্রয় হচ্ছে না।

নারীদের তার লালন-পালন করা পশু নিজের দায়িত্বে থেকে সেল করার সুযোগ যাতে পান সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাহলে তারা সামনে আরো বেশি পশুপালনে উৎসাহ পাবেন, উদ্যোগী হবেন, সার্ভিস ভালো দেবেন। এতে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। দেশের স্বার্থে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। পশুপালনের বিষয়ে কর্মজীবী নারীদের যে দাবি, তা একেবারে ফেলে দেওয়ার নয়।

লেখক : সাংবাদিক, কবি ও গীতিকার

  • নারীর ক্ষমতায়ন
  • পশুপালন
  • #