সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে জড়িত ছিল ফয়সাল ভুঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান। ১৯ তারিখ তারা দেশে ফেরে। শিমুল ভুঁইয়ার কাছ থেকে পায় মাত্র ৩০ হাজার টাকা। সেই টাকা নিয়ে নাম-পরিচয় বদলে সীতাকুণ্ড পাতাল কালীমন্দিরে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। সেখানে তারা হিন্দু পরিচয়ে আশ্রয় নিয়ে ২৩ দিন অবস্থান করে। আজ বুধবার (২৬ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তাদের ঢাকায় আনা হয়।
তাদের বহন করা হেলিকপ্টারটি বিকেলে পূর্বাচলে ১৮ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু ট্রাই-টাওয়ারের জমিতে অবতরণের পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনার তদন্ত করছিলাম। গতকাল শুনলাম তারা খাগড়াছড়ি বা সীতাকুন্ড পাহাড়ের দিকে অবস্থান করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের টিম গতকাল সেখানে সাঁড়াশি অভিযানে যায়। এরপর আজ সকালে আমরা আরেকটি টিম সেখানে যায়। অনেক উঁচু পাহাড়, সেখানে যাওয়া অনেক কঠিন। হেঁটে পৌঁছাতে ৭/৮ ঘণ্টা লাগে। পরে সেখান থেকে মোস্ট ওয়ানটেড দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, যে রুমটিতে সংসদ সদস্য আনারকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে ছিল ফয়সাল ভুঁইয়া। যিনি হত্যার আগে ক্লোরোফম দিয়ে অজ্ঞান করেছিল আনারকে। আর মোস্তাফিজুর রহমান আনারকে চেয়ারে বেঁধে বিবস্ত্র করেছিল, একই সঙ্গে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল। এরপর তাকে বাথরুমে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে মূল মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী হিসেবে ছিল গ্রেপ্তার জিহাদ, আর আজকে গ্রেপ্তার ফয়সাল ভুঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান।
হারুন দাবি করেন, এই দুজন গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এরপরও আমরা দুজনকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করব। তারপর তাদের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।
খাগড়াছড়ি তো গহীন অঞ্চল, সেখানে তারা কাদের আশ্রয়ে ছিল— জানতে চাইলে হারুন বলেন, সীতাকুন্ড পাহাড়ের নিচে পাতাল কালীমন্দির আছে। সেখানে তারা নিজেদের নাম বদলে ফেলেন। ফয়সাল পলাশ রায় আর মোস্তাফিজুর শিমুল রায় নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে মন্দিরে অবস্থান করেন। বলেন, মাকে তারা খুব ভালবাসেন। কালীমন্দির ছাড়া থাকতে পারি না। এভাবে তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে সেখানে ২৩ দিন অবস্থান করেন।
হারুন বলেন, তারা ইন্ডিয়াতে হত্যার কাজ শেষ করে ১৯ তারিখ দেশে ফেরেন। তারা শামীমের সঙ্গে কথা বলেন। দুজনকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা নিয়ে তারা খাগড়াছড়িতে চলে যায়। যেহেতু তারা আগে ট্রাকে চালাতেন সেজন্য তারা সীতাকুণ্ডের গহীন এলাকা চিনতেন। নিরাপদ ভেবে বাঁচার জন্য সেখানে অবস্থান নেন। হিন্দু নাম ধারণ করে আত্মগোপন করেন। বাঁচার জন্য তারা আরও নানান জায়গায় যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।