জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের শ্বশুর ও শাশুড়ির ১৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৯ কোটি টাকা জমা হওয়া এবং পরে তার বড় অংশ উত্তোলনের তথ্য পেয়েছে। দুদক আদালতে জানিয়েছে, ফয়সাল তার অপরাধলব্ধ আয় লুকানোর জন্য স্বজনদের নামে ৭০০টির মতো ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন। এর মধ্যে দুদক ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে। দুদকের নথি অনুযায়ী, ফয়সাল ও তার ১১ স্বজনের নামে ১৯টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে তার শ্বশুর-শাশুড়ির ব্যাংক হিসাবে।
দুদকের নথিতে ফয়সাল, তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিন, ফয়সালের ভাই কাজী খালিদ হাসান, শ্বশুর আহম্মেদ আলী, শাশুড়ি মমতাজ বেগম, শ্যালক আফতাব আলী, খালাশাশুড়ি মাহমুদা হাসান, মামাশ্বশুর শেখ নাসির উদ্দিন, আত্মীয় খন্দকার হাফিজুর রহমান, রওশন আরা খাতুন ও ফারহানা আফরোজের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আদালতে জমা দেওয়া দুদকের নথি বলছে, ফয়সালের শ্বশুর আহম্মেদ আলী একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তার শাশুড়ি মমতাজ বেগম পেশায় গৃহিণী। দুদক বলছে, ফয়সাল ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নিজের ও স্ত্রীর নামে রাখার পাশাপাশি স্বজনদের নামেও রেখেছেন। শ্বশুর ও শাশুড়ির নামের ব্যাংক হিসাবে যে অর্থ লেনদেন হয়েছে, তা ফয়সালেরই অপরাধলব্ধ আয়।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সাল ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ৫ কাঠার দুটি প্লট, শ্বশুরের নামে থাকা ঢাকার রমনা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ে শাশুড়ির নামে ১০ কাঠার প্লট জব্দ এবং ৮৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
দুদকের নথিতে ফয়সাল, তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিন, ফয়সালের ভাই কাজী খালিদ হাসান, শ্বশুর আহম্মেদ আলী, শাশুড়ি মমতাজ বেগম, শ্যালক আফতাব আলী, খালাশাশুড়ি মাহমুদা হাসান, মামাশ্বশুর শেখ নাসির উদ্দিন, আত্মীয় খন্দকার হাফিজুর রহমান, রওশন আরা খাতুন ও ফারহানা আফরোজের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আদালতে জমা দেওয়া দুদকের তথ্য বলছে, ফয়সালের নামে ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা জমা হয়। ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিনের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ফয়সালের শ্বশুর আহম্মেদ আলীর আটটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ১১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তাঁর নামের আটটি ব্যাংক হিসাবের দুটি ২০০৭ ও ২০১০ সালে খোলা। বাকিগুলো খোলা হয় ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে।
ফয়সালের শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে ৭ কোটি টাকা জমা হয়। তাঁর নামের ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে একটি ২০০৯ সালে খোলা হয়। বাকিগুলো খোলা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। ফয়সালের শ্যালক আফতাব আলীর ৬টি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জমার তথ্য পেয়েছে দুদক।
বিভিন্ন সময়ে এসব টাকা জমা হয়েছে। পরে তার বড় অংশ তুলে নেওয়া হয়েছে। জমা ও উত্তোলনের পর ফয়সাল, তাঁর স্ত্রী, শ্বশুর ও তাঁর স্বজনদের ১৯টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি টাকা। তাঁদের নামে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রও রয়েছে।
এদিকে খুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের পরিবারের দুটি বাড়ি ও প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া বাড়ির গ্যারেজে একটি টয়েটো ‘হ্যারিয়ার’ গাড়ি দেখা গেছে। তার স্ত্রী একটি হ্যারিয়ার গাড়িতে করে প্রায় খুলনায় ঘোরাফেরা করতেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বাড়ি খুলনা মহানগরীর মুজগুন্নী এলাকায়। তার বাবার নাম কাজী আবদুল হান্নান। তবে স্থানীয়রা তাকে ফিরু কাজী হিসেবে চেনে।
খুলনা মহানগরীর মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় প্রায় দুই বিঘার জমির একটি প্লট রয়েছে। মুজগুন্নী এলাকায় গিয়ে প্লটে ফিরু গাজীর নাম সাইনবোর্ডে ঝুলতে দেখা গেছে। এছাড়া যশোর রোডের নেছারিয়া মাদ্রাসার পাশে প্রায় দুই বিঘার জমির উপর আলিশান তিনতলা বাড়ি রয়েছে। গ্যারেজে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি দেখা গেছে। ওই বাড়িতে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বাবা-মা বসবাস করতেন। ওই বাড়িতে গেলে প্রতিবেদকের সঙ্গে কেউ কথা বলতে চাননি।
গত বৃহস্পতিবার কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। জব্দের আদেশ হওয়া সম্পদের মধ্যে আছে- কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের ঢাকার একটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠার দুটি প্লট। এছাড়া তার ও তার স্ত্রীসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করেছেন আদালত।
দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে।