বন সংরক্ষক থেকে ‘বনখেকো’ হয়ে উঠেছিলেন মোশাররফ হোসেন। দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। অর্জিত বেশিরভাগ সম্পদই করেছেন স্ত্রী পারভীন সুলতানার নামে। স্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও। তবে শেষ রক্ষা হয়নি মোশাররফ হোসেনের। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে মোশাররফ হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বেশিরভাগ সম্পদই করেছেন স্ত্রীর নামে। স্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। মোশাররফ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের ১১২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, তাদের নামে ফ্ল্যাট, জমি, বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যাংকে জমানো টাকা, মেয়াদি আমানতসহ নানা সম্পদ রয়েছে। সম্পদের উৎস গোপন করতে ও দুর্নীতির দায় থেকে নিজেকে আড়াল করতে অধিকাংশ সম্পদই স্ত্রী পারভীন সুলতানার নামে করেছেন। কালো টাকা সাদা করার উদ্দেশ্যে পারভীন সুলতানার নামে চালু করা হয় মেঘনা’স ফিটনেস সেন্টার। অপরাধলব্ধ অর্থ বৈধ দেখাতে মোশাররফ আবাসন খাতের ব্যবসায় নামেন।
বর্তমানে মোশাররফ মেঘনা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। দুদক সূত্র জানায়, বন বিভাগে চাকরিকালে তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। নামে-বেনামে তার শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক তথ্য। সম্পদ করেছেন সন্তানের নামেও।
জানা গেছে, মোশাররফের স্ত্রী পারভীন সুলতানার নামে ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডে অজান্তা অ্যাপার্টমেন্টে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে মেমোরো ভিলায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটির বি ব্লকে ১০ কোটি টাকা মূল্যের বহুতল বাড়ি, মানিকগঞ্জের রাখোরা মৌজায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ বিঘা জমি, ঢাকার বাড্ডার সাঁতারকুল মৌজায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৮ বিঘা জমি, রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির লেভেল-১, ব্লক সিতে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪০০ বর্গফুটের দোকান, রাজধানীর ৫৩, বায়তুল মোকাররমে ১০ কোটি টাকার ৩০০ বর্গফুটের দোকান, কক্সবাজারের টেকনাফে ৫ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ৩ বিঘা জমি, কক্সবাজার ইনানী সমুদ্রসৈকতে ১০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১ বিঘা জমি ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৬ কাঠা জমি।
মোশাররফের নামে আছে ঢাকার ধানমন্ডির ১৬ নম্বর রোডে (পুরোনো-২৭) ১৬ নম্বর প্লটে জেনেটিক প্লাজার চতুর্থ তলায় ৬ কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটেই তিনি বাস করেন। তাঁর নামে ঢাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে ২ কোটি টাকা মূল্যের ৩০০ বর্গফুটের দোকান, ঢাকার পূর্বাচলে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১০ কাঠা জমি, বাগেরহাটের গোপালকাঠি গ্রামে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১০ কাঠা জমি। এ ছাড়া বিভিন্ন জনকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি টাকা। মোশাররফের মেয়ে মোহনা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে ৫ কোটি টাকায় তাঁর নামে কেনা হয়েছে একটি ফ্ল্যাট।
কাস্টমস কমিশনার এনামুলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা