সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারনে পণ্ডু হয়ে গেছে। এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশের কঠোর অবস্থা অবস্থানের কারণে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় এবং নীলক্ষেত কোথাও বসতে পারেননি তারা। এ সময় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেখানেও বাধা দেয় পুলিশ।
নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলাম বলেন, সড়ক বন্ধ করে কেউ অবস্থান নিতে পারবে না। জনদুর্ভোগ এড়াতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে অবস্থান নেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন গেটে দুপুর থেকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। সাভার ও আশুলিয়া থানা পুলিশ একযোগে আজকের এ কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালন করছে। মহাসড়কে পুলিশের অন্তত ১০টি গাড়িকে টহলরত অবস্থায় দেখা গেছে। জলকামান ও লাঠিসোঁটা হাতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছ।
তবে আন্দোলন ও অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরিফ সোহেল বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলবে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আমরা আমাদের কর্মসূচি চলমান রাখব। আশা করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহযোগিতা করবে।
পুলিশের ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, গত কয়েক দিনের টানা অবরোধে সবাইকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আদালতের রায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসেছে। আদালতের প্রতি সম্মান রেখে তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকবেন। তা না হলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভবনের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে সাংবাদিকসহ ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর। ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জানা গেছে, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে রওনা হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে দেখে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ ফাঁকা গুলি করে। শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, ছাত্রদের সড়কে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।