দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে বরিশালের গৌরনদীতে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বার্থী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম রাশেদ সিকদার (২২)। তিনি উপজেলার বড় দুলালি গ্রামের কালাম সিকদারের ছেলে। অভিযুক্তরা হলেন- বার্থী ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা আল আমিন তালুকদার, ছাত্রদলকর্মী সাইমুন তালুকদার ও হামিম তালুকদারসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতের মা হাসনু বেগম বলেন, তাবলিগ-জামাতে এক চিল্লা দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ঢাকার বাসায় আসে রাশেদ। এরপর নাতি (রাশেদের ছেলে) রাফসান শিকদারকে (২) দেখার জন্য ঢাকা থেকে শুক্রবার দুপুরে গ্রামের বাড়ি এসে জুমার নামাজ আদায় করে।
নিহতের স্ত্রী সুমী বেগম বলেন, আমার ছেলে রাফসান (২) তার বাবার কাছে মিষ্টি খাওয়ার বায়না ধরে। এরই মধ্যে মোবাইলে ফোন করে ছাত্রদলকর্মী সাইমুন তালুকদার আমার স্বামী রাশেদকে সন্ধ্যার পর বার্থী বাজারে যেতে বলেন। ফোন পেয়ে আমার স্বামী তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে ও ছেলের জন্য মিষ্টি আনতে বার্থী বাজারে যায়।
নিহতের বড় ভাই রাসেল সিকদার অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই রাশেদ ঢাকা মহানগরীর ইসলামবাগ এলাকায় আমার ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছিল। সম্প্রতি রাশেদের কাছে একলাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল বার্থী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আল আমিন তালুকদারসহ তার সহযোগীরা। আমরা দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করি। চাঁদার টাকা না পেয়ে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আমার ভাই রাশেদকে বার্থী বাজারে পেয়ে ছাত্রদল নেতা আল আমিন তালুকদার, ছাত্রদলকর্মী সাইমুন তালুকদার, হামিম তালুকদারসহ ১০-১৫ জন তার (রাশেদ) ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার জন্য সে (রাশেদ) দৌড়ে বার্থী বাজারের কামরুল খানের দোকানে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে ধরে জোরপূর্বক বার্থী বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে হামলাকারীরা রাশেদকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা ফাটানোসহ রক্তাক্ত জখম করে।
মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে তাকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায় রাশেদ।
বার্থী বাজারের ব্যবসায়ী কামরুল খান অভিযোগ করেন, রাশেদ তার দোকানে আশ্রয় নেওয়ায় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। চাঁদা না পেয়ে রাশেদকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ এনে নিহতের ভাই রাসেল শিকদার বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চলছে।