পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার ও রফতানি বাজারকে মাথায় রেখে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মাশরুম চাষের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দরিদ্র হ্রাসকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় মাশরুমকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এর মেয়াদ ২০২৩-২৭ সাল পর্যন্ত।
প্রকল্প এলাকা ধরা হয়েছে সাভারের মাশরুম সম্প্রসারণ ইনস্টিটিউট, সারাদেশের ৩৪টি মাশরুম উপকেন্দ্র বা হর্টিকালচার সেন্টারসহ ৬৪টি জেলার ১৬০ উপজেলা এবং ১৫টি মেট্রোপলিটন থানা এলাকাকে। কাজ শুরুতে বিলম্ব হলেও পাঁচ বছরের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক আখতার জাহান কাঁকন।তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বিভাগে মাশরুম খাদ্য হিসেবে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তাছাড়া বন্দরকেন্দ্রিক এলাকা হওয়া এবং ব্যবসায়িক নগরী হিসেবে পরিচিতি থাকায় পুরো প্রকল্পে চট্টগ্রামকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ৬৪টি জেলার ২০০টি কেন্দ্রে মাশরুমের চাষাবাদের কথা বলা হলেও চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ৫০টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে মাশরুম। পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে মাশরুম। ডায়েটে মাশরুম রাখলে অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবারের ক্ষতি অনেকটাই ঠেকানো যায়।নারী, শিশু, অক্ষম ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠির পুষ্টিচাহিদা পূরণেও মাশরুম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমাদের গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কিংবা স্তূপিকৃত গোবর রাখার স্থানে ছাতার আকৃতির সাদা রংয়ের এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। একে আমরা ব্যাঙের ছাতা বলে অভিহিত করে থাকি। আগাছার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ছত্রাক খাবার উপযোগী নয়। খাবার উপযোগী মাশরুম সাধারণত চাষ করা হয়। অনুরূপ দেখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা উৎপাদিত হয়, তা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বিশ্বে সবজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
অত্যন্ত অল্প সময়ে অর্থাৎ মাত্র ২১ দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে মাশরুম পাওয়া যায় যা বিশ্বের অন্য কোন ফসলের বেলায় প্রযোজ্য নয়।ফলে লাভসহ পুঁজি ঘরে আসে। তাছাড়া, বাংলাদেশের আবহাওয়া সারাবছর মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী এবং পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহনশীল। দারিদ্র্যবিমোচনে বেকার যুবক-যুবতী ও নারীরা ঘরে বসে এর চাষ করতে পারে।মাশরুম চাষের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশি, ফলে এর চাষ অত্যন্ত লাভজনক। অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, মাশরুম উৎপাদন দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০,০০০ মে. টন মাশরুম প্রতিবছর উৎপাদন হচ্ছে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণন সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ প্রায় সব দেশেই মাশরুম আমদানি করে থাকে । বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আখতার জাহান কাঁকন আরও বলেন, দেশব্যাপী বিভিন্ন মাশরুম সেন্টারসহ সব জেলার কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এটি দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর পুষ্টি উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। ২০২৩ সালের শুরুতে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও নানা কারিগরি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করা হবে। মাশরুম শুধু উৎপাদনই সরকারের লক্ষ্য নয়, বরং দেশ্যবাপী বিপণনের জন্য উদ্যোক্তা তৈরিই আমাদের লক্ষ্য। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ উদ্যোক্তা তৈরি করতে পেরেছি। যেহেতু বিদেশে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা আছে সে কারণে আমরা এখন বিদেশী বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। দেশেও মাশরুমকে কেন্দ্র করে শিল্প-কারখানা গড়ে তোরা সম্ভব হবে। এটি নিয়ে আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মাশরুম চাষের পাশাপাশি মাশরুম বিপণন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাশরুম চাষের মাধ্যমে এদেশের পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা বেকারত্ব দূরীকরণ বিশেষ করে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ উন্নয়নের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।