সবধরনের অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বিরোধী যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। দুদিন আগে থেকে শিল্পাঞ্চলকেন্দ্রিক এ অভিযান চললেও আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারাদেশে যৌথবাহিনীর এ অভিযান শুরু হয়েছে। এ যৌথ অভিযানে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড ও র্যাব। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী গ্রেফতারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর কথা জানান। এ অভিযানে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র-গুলি ছাড়াও বিভিন্ন সন্ত্রাসীর হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র-গুলি ও চিহ্নিত মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার, স্থগিত কিন্তু জমা দেওয়া হয়নি এমন অস্ত্র জব্দ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ এর কারবারি ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে, যারা অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করেছেন এবং যারা অস্ত্র মামলার আসামি তাদের সবাইকে ধরা হবে।
জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ওই সময়ে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায় বিক্ষুব্ধরা। প্রাণ বাঁচাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে থানা থেকে পালিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় থানাগুলোতে পড়ে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাট করে নিয়ে যান অনেকে। এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ বেসামরিক নাগরিক বা পেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে শুরু হলো যৌথ বাহিনীর অভিযান।
যদিও এর আগে কয়েকদফায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং পুলিশ সদর দফতর থেকে থানা পুলিশের লুটকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় বা সেনাবাহিনীর কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য বিশেষ আহবান জানানো হয়। এছাড়া গত ১৫ বছরে বেসামরিক জনগণকে দেওয়া বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও স্থগিত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবারের মধ্যে গুলিসহ এসব আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ এ আহ্বানের সময়সীমা শেষ হয় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায়। মূলত এরপরই লুটকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ, সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্র বিরোধী অভিযান শুরু হয়।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ৩ হাজার ৮৮০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। গোলাবারুদের মধ্যে গুলি ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৩ রাউন্ড, টিয়ারশেল ২২ হাজার ২০১টি ও সাউন্ড গ্রেনেড ২ হাজার ১৩৯টি উদ্ধার হয়েছে। তবে পুলিশের লুট হওয়া সর্বমোট অস্ত্র-গোলাবারুদের পরিমাণের নিশ্চিত পরিসংখ্যান তৈরির কাজ চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ এর কারবারি ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার, স্থগিত কিন্তু জমা দেওয়া হয়নি এমন অস্ত্র জব্দ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ এর কারবারি ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যৌথ অভিযান নিয়ে ডিএমপিতে সমন্বয় সভা: দেশব্যাপী যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে মঙ্গলবার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতরে। ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় ডিএমপির কর্মকর্তারা ছাড়াও সেনাবাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, বিজিবি, র্যাব ও আনসার বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় অভিযান পরিচালনার ধরণ, কলাকৌশল ও আইনগত নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
এদিকে গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র জমা না দিলে তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য হবে। তাছাড়া, কোনো ব্যক্তির কাছে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষিত থাকলে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।