খুলনা মেডিকেলের ৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, আরএমওসহ ৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ১৭ জন বহির্বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা অনেক রোগী।

অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় ওই ৪১ চিকিৎসক আজ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেননি। এতে চিকিৎসক–সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগীরা। বিশেষ করে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি। নির্দিষ্ট চিকিৎসককে না পেয়ে অনেক রোগী দূরদূরান্ত থেকে এসে ফিরে গেছেন। বিশেষ করে মেডিসিন ও চর্ম রোগ বিভাগে দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে বেশি।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা থেকে আসা আরেফিন বিল্লাহ বলেন, বাড়ি থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছি সকাল ১০টার দিকে। দুপুর পার হলেও চিকিৎসক আসেননি। আমি শিক্ষকতা করি, আজ ছুটি থাকায় এসেছি। অথচ এসে ডাক্তার দেখাতে পারিনি। শুধু আমি নই, অন্য রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন।

বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন আফরোজা আক্তার। তিনি এসেছিলেন দিঘলিয়া উপজেলা থেকে। এর আগে যে চিকিৎসকের কাছে দেখিয়েছিলেন তিনি আজ নেই। তাই অন্য চিকিৎসকের কাছে দেখানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আফরোজা আক্তার বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সুমন রায়ের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু আজ তিনি না থাকায় অন্য এক চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে মানসিকভাবে স্বস্তি পাচ্ছেন না তবে উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে অন্য চিকিৎসকের কাছে এসেছেন।   হৃদরোগ সমস্যা নিয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব মো. লোকমান শরিফ। তিনি বলেন, চিকিৎসা নিতে এসে দেখেন, আগে যাঁকে দেখিয়েছেন, সেই চিকিৎসক নেই। এ কারণে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে উপস্থিত হন কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক মোস্তফা কামাল। এরপর তিনি দুটি কাগজ ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামানের সামনে দেন। একপর্যায়ে তাঁকে চাপ ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে গণপিটুনি দেওয়ার হুমকি দিয়ে কাগজ দুটিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেন, যার একটি ছিল আক্তারুজ্জামানের পদত্যাগপত্র ও অন্যটি হলো ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্চিত ঘোষণার।

ওই ৪১ চিকিৎসকের মধ্যে হাসপাতালের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পদের চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ চিকিৎসক আবার কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িতও নন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে গিয়ে চিকিৎসক মোস্তফা কামালকে পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

উপপরিচালকের দপ্তরে গিয়ে দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আক্তারুজ্জামান নেই। মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, জীবনে কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তারপরও তাঁকে এভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা খুবই দুঃখজনক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা এসে তাঁকে ফোন দিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে যেতে বলেছেন। তিনি হাসপাতালে যাবেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও সুমন রায়কেও অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বহির্বিভাগের মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী দেখেন। আজ তিনি চেম্বারে আসেননি। মুঠোফোনে কথা হলে সুমন রায় বলেন, ‘গতকাল যেভাবে মারমুখী ভূমিকায় আমাদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ কারণে আজ হাসপাতালে যায়নি। নিজেদের সম্মান যদি না থাকে, তাহলে চিকিৎসাসেবা দেব কীভাবে।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০ জনের বেশি চিকিৎসক সেবা দিয়ে থাকেন। গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।

আজ বুধবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের গিয়ে দেখা যায়, যেসব চিকিৎসকরা আসেননি তাঁদের কক্ষের সামনে কোনো রোগী নেই। বিশেষ করে দ্বিতীয় তলায় পুরোটাই ফাঁকা। ওই তলায় মেডিসিনের চিকিৎসক বেশি বসেন। তৃতীয় তলায় যেসব চিকিৎসক আজ এসেছেন তাঁদের কক্ষের সামনে রোগীদের দীর্ঘ সারি। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় অনেকে বিরক্ত হচ্ছেন।

তৃতীয় তলায় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক অঞ্জন কুমার চক্রবর্ত্তী। ইউরোলেজির চিকিৎসক হয়েও তিনি মেডিসিনের রোগী দেখছেন। তাঁর কক্ষের সামনে দীর্ঘ লাইন। অঞ্জন কুমার বলেন, রোগীর চাপ অনেক বেশি তবে রোগী সামলাতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। যাঁরা এসেছেন সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের অনেক চিকিৎসকের চেম্বারই ফাঁকা। চিকিৎসক না থাকায় ভোগান্তি পোহান রোগীরা
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের অনেক চিকিৎসকের চেম্বারই ফাঁকা। চিকিৎসক না থাকায় ভোগান্তি পোহান রোগীরাছবি: প্রথম আলো
তৃতীয় তলার টিকিট মাস্টার সাবরিনা আক্তার বলেন, স্বাভাবিক দিনের মতোই রোগী এসেছেন। যেহেতু চিকিৎসক-সংকট, এ কারণে গুরুতর রোগীদের অন্য চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হচ্ছে। আর একটু কম গুরুতর রোগীদের আগামী শনিবার আসার জন্য অনুরোধ করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সূত্র : প্রথম আলো, ঢাকা পোস্ট

  • খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
  • #