বগুড়ায় বিএনপি নেত্রী সুরাইয়া জেরিনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ১২৬ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বগুড়া সদর থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটির বাদী বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাবতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সুরাইয়া জেরিন। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মজনু, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম আসাদুর রহমান দুলু, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাশরাফী হিরো, বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান ববি, বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান সফিক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান শাহীন, শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু, শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানুর সাকিল, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়, মহিলা আওয়ামী লীগের জেলা শাখার সভাপতি হেফাজত আরা, সাধারণ সম্পাদক পিংকি সরকার, বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ডালিয়া নাসরিন রিক্তা, গাবতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকসেনা জালাল, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মুন্নি সাবেরাত প্রমুখ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৯ মে বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে দেওয়া একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি নেত্রী সুরাইয়া জেরিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হয়রানিমূলক মামলা করে। ওই বছরের ১৭ জুলাই বেলা ৩টার দিকে বগুড়া আদালতে জামিন প্রার্থনার জন্য আত্মসমর্পণ করতে গিয়েছিলেন সুরাইয়া জেরিন। এ সময় সাবেক দুই সংসদ সদস্যের নির্দেশে আসামিরা বগুড়া শহরের জেলা পরিষদ সংলগ্ন সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে ঘোড়া চত্বর পর্যন্ত মুহুর্মুহু ককটেল হামলা করে এবং রিভলবার ও পিস্তল দিয়ে গুলিবর্ষণ করেন।
অন্য আসামিরা দেশি অস্ত্র হাতে সুরাইয়া জেরিনের ওপর হামলা করেন। এ সময় আসামিরা সুরাইয়া জেরিনের চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান এবং কিলঘুষি মারেন। একপর্যায়ে আদালত পুলিশের সহযোগিতায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁকে এজলাসে পৌঁছে দেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরে সুরাইয়া জেরিনকে আদালত থেকে প্রিজনভ্যানে কারাগারে নেওয়ার সময় অন্য আসামিরা পচা ডিম, স্যান্ডেল, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে আহত হলে কারাগারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে সময় ছড়িয়ে পড়ে। আসামিরা তৎকালীন সরকারদলীয় নেতা-কর্মী হওয়ায় ওই সময়ে মামলা করতে পারেননি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর মামলা দাখিল করেছেন।