হাতিয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্সে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে সালিশ ডেকে কনের বাবা-মা-ভাইকে বেত্রাঘাত ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
স্থানীয় যুবদলের এক নেতা এ সালিশ ডাকেন। এতে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এতে অংশ নেন। গত ২০ অক্টোবর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। তবে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় কনের ভগ্নিপতির অটোরিকশা আটক করা হয়।
অটোরিকশাটি আটকে রাখার সূত্রে বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হয়। যদিও স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীর মধ্যস্থতায় অটোরিকশা আবার ফেরত দেওয়া হয়।
কনের পরিবারের অভিযোগ, ২০ অক্টোবর ওই বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সে অনুষ্ঠানের আগের রাতে সাউন্ড বক্সে গান বাজায় তারা। ওই দিন রাতেই স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফছার উদ্দিন কেন গান বাজানো হয়েছে, সে কৈফিয়ত চান। এ নিয়ে কনের ভাইয়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরদিন রাতে কনের বাড়িতেই সালিশ বসে। সালিশে গান বাজানোর কারণে কনের মা-বাবা ও ভাইকে ১০ ঘা বেত্রাঘাত করা হয়।
জানতে চাইলে কনের ভাই জানান, তারা রাত ১০টা পর্যন্ত গান বাজিয়েছিলেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির পরের দিন রাত ৯টার দিকে আফছার তার দলীয় লোকজন নিয়ে এসে তাদের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক বসান। সে বৈঠকে তাদের বিরুদ্ধে সাউন্ড বক্সে গান বাজানোর পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়। টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ সত্য নয়। এ অভিযোগে তাদের প্রকাশ্যে ১০ ঘা বেত্রাঘাত করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল নেতা আফছার উদ্দিন জানান, জেলা শহরের সোনাপুর থেকে জেলেদের মাছ বিক্রির টাকা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। তখন বাড়ির সামনে কনের ভাইকে দাঁড়ানো দেখে সাউন্ড বক্সে গান বাজানোর বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরে কনের পরিবারের লোকজন তার ওপর হামলা করেন। এ সময় তার ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। বিষয়টি দলীয় লোকজন জানার পর রাতে সালিশ হয়। তবে সেখানে বেত্রাঘাতের সিদ্ধান্ত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তছলিম উদ্দিন ও স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন মাঝি এ সালিশ পরিচালনা করেন। মো. তছলিম উদ্দিনই বেত্রাঘাত করেছেন বলে কনের পরিবারের অভিযোগ। এ বিষয়ে জানতে তছলিম উদ্দিনকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। পরে আলাউদ্দিন মাঝি সালিশে জরিমানার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে বেত্রাঘাত করা হয়নি বলে জানান।
আলাউদ্দিন বলেন, বিয়েবাড়িতে গান বাজানোর ঘটনায় স্থানীয় এক রিকশাচালক প্রতিবাদ করেছিলেন। পরে কনের বাড়ির লোকজন ওই রিকশাচালক ও আফছারের ওপর হামলা করেন। এ নিয়ে সালিশ হয়। এতে বিয়েবাড়ির লোকজনের কারণে আফছারের ৫০ হাজার টাকা হারানোর কারণে ওই টাকা জরিমানা করা হয়।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আজমল হুদা বলেন, বিষয়টি তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।