দুবাইয়ে গোপনে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনী ব্যক্তিরা। আকাশচুম্বী ভবনের এই শহরে তারা প্রত্যেকেই কোটি কোটি ডলারের সম্পদের মালিক। এই তালিকায় বড় ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী রাজনীতিক থেকে শুরু করে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞায় থাকা অর্থ পাচারকারী এবং অপরাধীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৪ মে) ‘দুবাই আনলকড’ নামের ওই নথি প্রকাশ করা হয়।। বৈশ্বিক একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্পের ফাঁস হওয়া ওই তালিকায় ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির মতো ব্যবসায়ীসহ ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি থেকে শুরু করে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যক্তি, অর্থপাচারকারী ও অপরাধীদের নামও রয়েছেন।
‘দুবাই আনলকড’ এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্পের সমন্বয় করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোর। এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছে ৫৮টি দেশের ৭৪টি সংবাদমাধ্যম। প্রতিবেদনটি ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যগুলো দুবাইয়ের ভূমি দপ্তরসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই অনুসন্ধান চালিয়েছে। এতে বিশেষ করে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল নাগাদ দুবাইয়ে এসব ব্যক্তির মালিকানায় থাকা ও ব্যবহার করা সম্পদের বিস্তারিত চিত্র উঠে আসে।
সব মিলিয়ে ফোর্বস ২২ ধনকুবের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৬০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ৭৬টি সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে। বিশ্বের চারটি মহাদেশের ১০টি দেশ থেকে এসেছেন তারা। ১০ ধনকুবের ও তাদের সম্পদ
ফোর্বসের প্রতিবেদনে ১০ ধনকুবেরের নাম, তাদের নিট সম্পদ ও দুবাইয়ে থাকা সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
শুরুতেই রয়েছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির নাম। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১১ হাজার ২০ কোটি ডলার। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ কৃত্রিম দ্বীপে তার আনুমানিক ২৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। ভারতীয় নাগরিক এম এ ইউসুফ আলী ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭৮০ কোটি ডলার। পাম জুমেইরা, দুবাই মেরিনা এবং ইন্টারন্যাশনাল সিটিতে তাদের ৭ কোটি ডলার মূল্যের সম্পত্তি রয়েছে। আরেক ভারতীয় শামশীর ভায়ালিলের সম্পদ ৩৫০ কোটি ডলারের। দুবাই হিলস ও দুবাই প্রোডাকশন সিটিতে তিনি ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সম্পদের মালিক।
ওমানের নাগরিক সুহাইল বাহওয়ান ১৯০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক। জুমেইরাহ বে আইল্যান্ড, মেদান ও ডাউনটাউন দুবাইয়ে তাঁর সাড়ে ৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। রাশিয়ার নাগরিক আন্দ্রেই মোলচানভ ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার। পাম জুমেইরাহ এলাকায় তাঁদের ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের সম্পদ রয়েছে।
সাইপ্রাসের নাগরিক বিনোদ আদানি ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক। এমিরেটস হিল, জুমেইরাহ লেক টাওয়ারস, জুমেইরাহ পার্ক, ডাউনটাউন দুবাই, দুবাই মেরিনা, ইন্টারন্যাশনাল সিটি ও দুবাই সিলিকন ওয়েসিসে তার ২ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। অবশ্য ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে বিনোদ আদানিকে ভারতীয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কানাডার নাগরিক চ্যাংপেং ঝাও ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক। ডাউনটাউন দুবাইয়ে তাঁর ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সম্পদ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের নাগরিক সকেট বর্মনের সম্পদের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ দ্বীপে তাঁর ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সম্পদ রয়েছে। সাইপ্রাসের নাগরিক ইগর মাকারভ ২১০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক। পাম জুমেইরাহ এলাকায় তিনি ১ কোটি ১০ লাখ ডলারের সম্পদের মালিক। মিসরের নাগরিক নগিব সাবিরিস ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৩৮০ কোটি ডলার। পাম জুমেইরাহ এলাকায় তাঁদের ১ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, বখতাওয়ার ভুট্টো জারদারি এবং আসিফা ভুট্টো জারদারি; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভির স্ত্রী মিসেস আশরাফ; সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলে হুসেইন নওয়াজ এবং সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ারের ছেলে সাদ সিদ্দিক বাজওয়ারের নাম রয়েছে।
এছাড়া তালিকায় চীন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকদের নাম ছাড়াও ইয়েমেন, নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার মতো দেশের নাগরিকদের নাম রয়েছে। সেখানে মিয়ানমারের এক নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে। আফগান নাগরিকদের নামও দুবাইয়ে গোপনে সম্পদ গড়া ব্যক্তিদের এ তালিকায় রয়েছে। দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অন্তত সাত নাগরিকের নাম আছে।